করোনা: কক্সবাজারে বেতন ছাড়াই হোটেল শ্রমিকদের ছুটি!

তুষার তুহিন ◑
বেতন- ভাতা পরিশোধ না করে কক্সবাজার জেলা শহরের পর্যটন জোনের আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরায় কর্মরত প্রায়ই ৩৫ হাজার শ্রমিককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে মালিকরা। এনিয়ে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে শ্রমিকদের মাঝে। বকেয়া বেতন পেতে মালিকদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, পৌর মেয়র সহ সংশ্লিষ্ঠদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে শ্রমিক নেতারা।

সূত্র জানায়,  ১৯ মার্চ করোনা ভাইরাসের কারনে কক্সবাজার জেলায় সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধের ঘোষনা দেয় জেলা প্রশাসন। আর সেই ঘোষনার পরপরই শহরের কলাতলীর পর্যটন জোনের প্রায়ই নিরানব্বই ভাগ রেস্তোরা বন্ধ করে দিয়েছে রেস্তোরা মালিকরা। এছাড়া সকল আবাসিক হোটেল থেকে আশি শতাংশ কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। তবে এই বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো অধিকাংশ শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ভাতা পরিশোধ করেনি সংশ্লিষ্ঠরা।

এ বিষয়ে কক্সবাজার হোটেল ম্যানেজার ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক কলিমউল্লাহ বলেন, কলাতলী থেকে ঝাউতলা পর্যন্ত অবস্থিত ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল, কটেজ ও রেস্তোরায় প্রায়ই ৪০ হাজার শ্রমিক কাজ করে। করোনার কারণে এদের মধ্যে প্রায়ই ৩৫ হাজার শ্রমিককে ছুটিতে পাঠিয়েছে মালিকপক্ষ। এই ৩৫ হাজার শ্রমিকের আয়ের উপর প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে। অথচ মালিকপক্ষ তাদের বেতন-ভাতা না দিয়ে বাধত্যমূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে। এই দুর্যোগ মুহুর্তে মালিকদের মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করা দরকার।

তিনি আরো বলেন, রেস্তোরা থেকে প্রায়ই ২০ হাজার শ্রমিককে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। আর হোটেল, মোটেল, গেষ্ট হাউজ ও কটেজ থেকে প্রায়ই ১৫ হাজার শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়েছে। আসলে কিছু মালিক শ্রমিকদের ঈদ বোনাস ও ভাতা না দেওয়ার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে এই করোনা ভাইরাসের সময়টাকে। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ঠদের নজর দেওয়া জরুরী।

এদিকে কক্সবাজার জেলা রেস্তোরা শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক সেলিম ব্লিডার বলেন, রেস্তোরার ২০ হাজার শ্রমিকের পরিবার এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেতন কাজ করি। অথচ আমাদেরকে ছুটিতে পাঠানোর সময় বেশিরভাগ রেস্তোরা মালিকরা আমাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেনি। এই বেতন –ভাতা পেতে আমরা মালিকপক্ষ সহ জেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। আমাদের বেতন পরিশোধ যাতে দ্রুত করা হয় সেজন্য গতকাল কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে বরাবর আমরা আবেদন করেছি।

কক্সবাজার জেলা শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক শফিউল্লাহ আনসারি বলেন, দূর্যোগের কারণে মালিকরা হোটেল ও রেস্তেরা থেকে শ্রমিকদের ছুটি দিয়েছে। সামনে রমজান মাস। রমজানেও তারা প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ছুটিতে থাকবে। তার অর্থ শ্রমিকদের প্রায়ই দুইমাসেরও বেশি সময় বেকার থাকতে হবে। অতীতে রমজান মাসে শ্রমিকদের ছুটি দেওয়ার সময় মালিকরা বেতন- ভাতার পাশাপাশি ঈদ বোনাসও দিত। কিন্তু এবার তারা করোনার সুযোগ বেতন ভাতা না দিয়েই শ্রমিকদের ছাটাই করেছে। যা অমানবিক। আশা করছি মালিকরা মানবিকভাবে দৃষ্টিকোন থেকেই শ্রমিকদের পাশে দাড়াবে।

কক্সবাজার রেস্তোরা মালিক সমিতির সভাপতি নইমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, কোন শ্রমিকেই বেতন বকেয়া নেই। তারা যতদিন কাজ করেছে ততদিনের মজুরি দিয়েই ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তবে  কিছুদিনের মধ্যেই তাদেরকে অগ্রিম কিছু টাকা দেওয়া হবে। সেজন্য মালিকরা দ্রুত বৈঠকে বসবে। সিদ্ধান্ত নিয়েই তাদের হাতে অগ্রিম টাকা দেওয়া হবে।

কক্সবাজার হোটেল- মোটেল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন,  আমার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হোটেলের কর্মচারীদের ছুটিতে পাঠানোর সময় তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছি। এই ক্রাইসিস যতদিন থাকবে ততদিন তাদের বেতন ভাতা অব্যাহত থাকবে। ঈদের আগে সঠিক সময়ে তাদের বোনাস প্রদান করা হবে। এটি আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য চলতি মাসের শেষভাগে সংগঠনের বৈঠকে করা হবে। বৈঠকেও এইসব প্রস্তাবনা তুলে ধরা হবে। আশা করছি মানবিক দিক বিবেচনা করে সকল হোটেল মালিকদের এই প্রস্তাবনা সাদরে গ্রহন করবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়নি মর্মে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উভয়পক্ষের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করে সুরাহা করা হবে।